আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্নে সিলেটের জাকেরের নানা ছলচাতুরী!

বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক:
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৮:৪০,অপরাহ্ন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১- 172Shares
নিজের শারীরিক অক্ষমতা গোপন করে আমেরিকান কন্যা মৌসুমিকে বিয়ে করে স্বপ্নের আমেরিকায় পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন সিলেটের জাকের আহমেদ। তিনি জেনেশুনেই ডিভোর্সী ও এক পুত্র সন্তানের মা মৌসুমীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের রাতেই নিজের শারীরিক অক্ষমতা প্রকাশ পায় মৌসুমির কাছে। লোক লজ্জার ভয়ে তার শারীরিক অক্ষমতার কথা নিজের পিতা-মাতাকে জানায়নি মৌসুমী। জাকেরের ভাবী ও বোনকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা মৌসুমীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন এসব বলতে নেই। এটা লোকে শুনলে লজ্জা হবে। আর এটা তোমার দ্বিতীয় বিয়ে। মৌসুমী এসব কথাকে গুরুত্ব দিয়ে সবকিছু মেনে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে জাকের বিভিন্ন ছলচাতুরী শুরু করলে তার সাথে বাদানুবাদ হয়। মৌসুমী বুঝতে পারে জাকেরের উদ্দেশ্য শুধু আমেরিকায় পাড়ি দেওয়া। যেভাবে তার পুর্বের স্বামীও আমেরিকায় আসার জন্য বিয়ে করেছিল।
এই প্রতিবেদকের কাছে জাকেরের সাথে মৌসুমীর বাদানুবাদ ও স্থানীয় কাজীর সাথে আলাপের দুইটি অডিও টেপ এসে পৌছেছে। এতে স্পষ্ট শোনা যায়, জাকের তার শারীরিক অক্ষমতার কথা স্বীকার করে স্ত্রীকে সবকিছু মেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মৌসুমী বলেন, আমি সবকিছু মেনেই তোমাকে নিয়ে সংসার করার কথা চিন্তা করেছিলাম, যার কারণে আমেরিকায় এসে তোমাকে আমি কয়েক দফায় বড় অংকের টাকা দিয়েছি। যার প্রমান আমার কাছে আছে। কিন্তু তোমি তোমার শারীরিক অক্ষমতার কথা অস্বীকার করছো কেন? জাকের আহমেদ বলেন, আমি জানি আমার সমস্যার কথা, এরজন্য কি (সুইসাইড) আত্মহত্যা করবো? জাকেরের সাথে মৌসুমীর এমন বাদানুবাদ শুনতে পান মৌসুমীর মা? তিনি মৌসুমীকে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? মায়ের চাপে মৌসুমী জাকেরের সমস্যার কথা জানালে তারা অবাক হয়ে বলেন এভাবে তোমার জীবন কিভাবে চলবে?
-২০২০ সালে ১৫ জানুয়ারী আকদের দিন মৌসুমীর ছেলেকে কোলে নেওয়া জাকের-
জাকেরও বুঝতে পারেন তার বিয়ে টিকবেনা। শুরু করেন নানা ছলচাতুরী। মামলা করতে প্রথমেই স্থানীয় কাজীর সাথে যোগাযোগ করে বিয়ের কাবননামায় লিখিয়ে নেন মৌসুমী কুমারী ছিলেন। (পরবর্তীতে কাজীর সাথে মৌসুমীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে কাজী স্বীকার করেন তার সহযোগীর কাছ থেকে কাবিননামা সে চালাকি করে তুলে নিয়েছে। যার অডিও টেপও এই প্রতিবেদকের কাছে আছে)।
শারমিন সুরভী মৌসুমী বলেন, বাবা-মার পছন্দমতো ২০১২ সালের ৩০শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার পৃত্থিমপাশা সুজাপুর গ্রামের মো. শফিক মিয়ার ছেলে ডা. মো. ফরিদ আহমদের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ২০১৫ সালের মার্চে তিনি আমেরিকায় আসেন। ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল আমার এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যেই আমি বুঝতে পারি আমার ডাক্তার স্বামীর কারো সাথে দেশে সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আমাকে নানাভাবে বুঝাতে চান আমেরিকায় তিনি থাকতে চাননা। গ্রীন কার্ড পাওয়ার সাথে সাথেই বাবার অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি দেশে যেতে চান। আমি নিজে উনাকে রিটার্ন টিকেট করে দেশে পাঠাই। দেশে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই তিনি আমাকে ফোনে বলেন তিনি আর আমেরিকায় আসতে চাননা। আমি চাইলে দেশে যেতে পারি। উনি জানেন এটা সম্ভব না তাই আমাকে অফার করেছিলেন। আমি উনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি তা রাখেননি। ২০১৭ সালে তিনি আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন। এরপরে জানতে পারি তিনি তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এখন তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে। এরপরে ২০২০ সালে বাবা-মার ইচ্ছায় দেশে গিয়ে আমার মায়ের আত্মীয় সিলেটের গোলাপগঞ্জ ভাদেশ্বর দক্ষিণভাগ গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে জাকের আহমদের সাথে বিয়ে হয়। বাসর রাতেই বুঝতে পারি জাকেরের শারীরিক সমস্যা। জাকেরের মা-ভাবী ও বোনের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। তারা আমাকে নানাভাবে বোঝাতে থাকেন। আমিও এসব মেনে নেই। জাকেরের বড় ভাইদেরও কোন সন্তানাদি নেই। বড় ভাই আব্দুল কাদিরের স্ত্রী আমাকে আকারে ইঙ্গিতে তার ভাইয়ের একই সমস্যার কথা আমাকে বলেছেন। দশ বছর ধরে তারা সন্তানহীন। তার মেঝো ভাই জামিল আহমেদের স্ত্রী বিয়ের দুই সপ্তাহের মাথায় ভোরেই ঘর থেকে পালিয়ে যায়। এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা এটা। জাকেরের মা ও বোন আমাকে নানাভাবে বুঝিয়ে বলেন আমেরিকায় নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখালেই সে ঠিক হয়ে যাবে। তার বড় ভাই ডুবাই থেকে ফোনে আমাকে বোঝাতে থাকেন এসব সবাইকে জানাতে নেই। এটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। আমার প্রথম স্বামী ডাক্তার ফরিদ যখন বিয়ে করেছেন শুনেছি তখনই আমি এদেশে এম্বেসি ও ফ্যামিলি কোর্টে বিষয়টি অবহিত করেছি। গ্রীন কার্ড নিয়ে আমেরিকা আসতে পারবেনা জেনেই জাকেরের সাথে মিলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলা করেছে। জাকেরকে বিভিন্ন দফায় কয়েক লক্ষ টাকা পকেট খরছের জন্য দিয়েছি সেটার প্রমাণও আমার কাছে আছে। ১৫/২০ লক্ষ টাকার জন্য আমেরিকায় ওয়েল স্টাবলিশ কোন পরিবার তার সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট করতে পারেনা। আমি আশাবাদি বাংলাদেশের আদালত পুলিশ এসব বিবেচনায় রেখে বিষয়টি দেখবেন।
মৌসুমীর পিতা রফিকুর আর এমএ মুনিম বলেন, মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম নিজেদের পছন্দমতো। প্রথম স্বামী গ্রীন কার্ড পাওয়ার পর দেশে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে পরবর্তীতে বিয়ে করে। এক পুত্র সন্তান রেখে এভাবে কেউ যেতে পারে তা সমাজে বিরল। পরবর্তীতে আমার যুবতী মেয়ের কথা চিন্তা করে আমার স্ত্রীর আত্মীয় জাকেরের সাথে বিয়ে দেই। আমরা জানতামই না জাকেরের সমস্যার কথা। আমার মেয়ের সাথে ফোনে জাকেরের বাদানুবাদ মৌসুমীর মা শুনতে পেয়ে জানতে চান বিষয়টি। মায়ের চাপে মৌসুমী সবকিছু খুলে বললে আমি এখানকার স্পেশালিস্ট ডাক্তারের সাথে বিষয়টি জানার চেষ্ঠা করি। তারা আমাকে নিরাশ করে বলেন, এরকম ভুক্তভোগীদের জন্য আসলে করার কিছুই নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মেয়েকে যার কাছে বিয়ে দিলাম তার এরকম অক্ষমতা থাকলে কে মানবে। তাও আমরা সরাসরি বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করিনি। কিন্তু এরই মধ্যে জাকেরের বিভিন্ন ছলচাতুরী আমার মেয়ে মৌসুমী বুঝতে পারে। আমার মেয়ে আমাদের কখনো বলেনি সে জাকেরকে কয়েক দফায় টাকা দিয়েছে। জাকেরের পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমার মেয়ে তার পকেট খরছ ও পরিবার নিয়ে চলার জন্য সহযোগীতা করেছে। এখন তারা যেভাবে ষড়যন্ত্র করে ঘটনা সাজিয়েছে তা দেশের মাননীয় আদালত ও পুলিশ প্রশাসন ভালোভাবে তদন্ত করলেই সবকিছু বেরিয়ে আসবে। আমরা প্রবাসী মানুষ। এভাবে যদি প্রবাসীরা হয়রানীর স্বীকার হয় তাহলে দেশের প্রতি মানুষের আগ্রহই কমে যাবে। আমরা জানি বর্তমান সরকার প্রবাসীদের প্রতি আন্তরিক। প্রয়োজনে আমরা বিষয়টি আমেরিকার বাংলাদেশী কমিউনিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্ধকে জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন পর্যায়ে অবহিত করবো। আর আমরা আশাবাদি ন্যায় বিচারের।
- 172Shares