উত্তাল লেবানন, বাংলাদেশিদের সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ

হেলাল আহমেদ, লেবানন
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০০:০০,অপরাহ্ন ২০ অক্টোবর ২০১৯বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রচ্যের দেশ লেবানন। দেশটিতে সাম্প্রতিক নানা সমস্যার প্রতিবাদে রাজধানী বৈরুতের রাস্তায় নেমে এসেছে বিপুল সংখ্যক জনতা। লেবাননে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ শনিবারও তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশে জরুরি অর্থনৈতিক অবস্থা ঘোষণা, মার্কিন ডলারের সংকট, বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে দ্রব্যপণ্যের উপর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি, হোয়াটস অ্যাপের কল রেট বৃদ্ধি ও বর্তমান সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
বিক্ষোভকারীরা বৈরুতের রিয়াদ আল-সোলহ চত্বরে সরকারি সদরের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকটি বড় রাস্তায় টায়ারে আগুন লাগিয়ে ব্যারিকেড দেয়।
লেবাননের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বাহিনীর (আইএসএফ) এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, বিক্ষোভে তাদের চল্লিশ সদস্য আহত হয়েছে। আইএসএফ বিক্ষোভকারীদের ‘বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা’থেকে নিবৃত্ত থাকারও আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বলছে, তারা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরও বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবে। এই ঘোষণাগুলো দিনের বেলা লেবাননের সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং রাতারাতি তা বড় ধরনের বিক্ষোভে রূপ নেয়। বিক্ষোভ চলাকালে আইন শৃংখলা বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরেই বৃহস্পতিবার রাতে সরকার ভিওআইপি ট্যাক্স প্রস্তাব প্রত্যাহার করে লেবানন সরকার।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার অজুহাতে নিত্যপ্রয়াজনীয় ও ব্যবহার্য অনেক দ্রব্যের উপর কর আরোপ করছে সরকার। এমনকি হোয়াটঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার কলের উপরও কর আরোপ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৈরুতসহ পুরো লেবাননে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছাত্র-জনতাসহ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় ময়লার ড্রাম ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং টায়ার পোড়ায়। সাধারণ জনগণ ও যানবাহনের ক্ষতিসাধন না করে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চলে শুক্রবারও।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ ছিল। রাস্তায় হালকা যানবাহন চলাফেরা করে। বিক্ষোভকারীদের টায়ার জ্বালানো আর নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপে বহু মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিক্ষোভের কারণে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি শুক্রবারের মন্ত্রিসভার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন। তার দলের সাথে যুক্ত একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, সরকারের সদর দফতরের আশপাশে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হওয়ার পরে মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল করা হয়।
লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল করিম খান বলেন, ‘কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করা বা মতামত দেয়া বা সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকার বিদেশি হিসেবে আমাদের মানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেই। তবে এই পরিস্থিতি নিয়ে আমরা শংকিত। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’
লেবাবন ‘প্রবাসী ভাইবো’ সামাজিক সংগঠনের সভাপতি শরীফ খান খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তা-ঘাটে বের না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাস কর্মকর্তারা। সবাইকে সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭২ ঘণ্টা সময় চাইলে বিক্ষোভকারীরা তা প্রত্যাখান করে এবং গভীর রাত অবধি রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় বৈরুতের রিয়াদ আল-সোলহ স্কয়ারের আশপাশের এলাকাগুলো স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়।