করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ গণমাধ্যমকর্মী ও সংবাদপত্র

রুহুল ইসলাম মিঠু::
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৭:৩৫,অপরাহ্ন ২৬ আগস্ট ২০২১বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ করোনা সংক্রমনকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মফস্বল এলাকার গণমাধ্যমকর্মীরা। এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে অসংখ্য গণমাধ্যমকর্মী তাদের নির্ধারিত পেশা কেউ কেউ হারিয়ে পরিবর্তন করেছেন। আবার অনেকের প্রশাসনিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড যথা সময়ে না পেয়ে ক্যারাম খেলে অবসর সময় কাটানোর গল্প শোনা গেছে।
জাতীয় থেকে শুরু করে আঞ্চলিক গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা অনেকেই ছাঁটাইয়ের শিকার। কাউকে বাধ্যতামূলক বিদায় হয়ে কর্ম ত্যাগ করে পরবর্তী অপেক্ষার জন্য রয়েছেন। বিশেষভাবে সাংবাদিকরা করোনা সংক্রমনকালে আর্থিক, মানবিক এবং শারীরিকভাবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন ঝুঁকি নিয়ে। সেজন্য সাংবাদিকরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন।
সরকারের রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত সাপ্তাহিক ও দৈনিক সংবাদপত্রসহ স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলভূক্ত সাংবাদিকগণ শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার। তাদের এই ক্ষতি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আঞ্চলিক পর্যায়ে কিছু কিছু সাপ্তাহিক ও দৈনিক সংবাদপত্রগুলো করোনা পরিস্থিতির শিকার হয়ে আর্থিক অনটনে পড়ে রীতিমত প্রকাশনার কাজ করা যাচ্ছিল না। সারা দেশজুড়ে কাজ করা অগণিত সাংবাদিকদের মধ্যে এই বিরুপ প্রভাব পড়েছে। এই বিরুপ প্রভাবের মধ্যে বিশ্বের বহু দেশের সাংবাদিকরা একই ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারেকশন্যাল সেন্টার ফর জার্নালিজম বা আইসিএফজে বিশ্বের ১২৫টিসহ মোট ১৪০৬ জন সাংবাদিকের ওপর পরিচালিত গবেষণায় এমন তথ্য বের হয়ে আসে। বিশ্ববাপী সংবাদ শিল্প করোনা সংক্রমণ মহামারির প্রভাব কতটা পড়েছে তা জানতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টো সেন্টার ফর ডিজিটাল জার্নালিজমের সঙ্গে আইসিএফজে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের ওপর এই গবেষণা চালিয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ৩২০০ জনের কম বেশি সাংবাদিক করোনাকালে শারীরিক ও আর্থিক এবং মানবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। প্রতি বিভাগীয় অঞ্চলে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন সাংবাদিক এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
সরকারী প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় তালিকাভূক্ত সাংবাদিকরা ১০ হাজার টাকার প্রণোদনা পেলেও এখনও অনেক সত্যিকারের পরিশ্রমি সাংবাদিক সরকারি প্রণোদনার তালিকাভূক্ত হননি এবং তারা প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যারা সরকারি প্রণোদনা পাবার যোগ্য ছিলেন।
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকরা বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারের খাবার দাবার নিয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তাদের দুর্দশা ও বেড়েছিল। সরকার সাংবাদিকদের যেসব প্রণোদনা দিয়েছেন এর বাইরে আরো সাংবাদিক রয়েছেন। তারা তো সরকারী অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বঞ্চিতদের খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাখেননি। সেজন্য সরকার করোনা সংক্রমণকালে ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রণোদনার অনুদান থেকে বঞ্চিত সাংবাদিকদের তালিকা করে অনুদান প্রদানের ব্যবস্থার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সবাই মনে করেন দেশের ক্রান্তিলগ্নে, ওয়ান ইলেভেনের সময়ে, দেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবার হত্যাকা- সহ বিভিন্ন পরিস্থিতির পরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে এমনকি এই করোনা সংক্রমনকালেও সাংবাদিকরা বীরের মতো জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট অঞ্চলের তথা দেশের স্বনামধন্য মেধাবী সাংবাদিকরা সম্মুখসারির যোদ্ধা হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় মাঠে ঘাটে সরকার ও জনগণের সুখ-দুঃখের সমস্যা সংবাদপত্রে তুলে ধরে দেশকে এগিয়ে দিয়েছেন।
বরাবরের মতোই এদেশের জাতীয় থেকে মফস্বল পর্যায়ের লেখক সাংবাদিকরা জাতির দুর্দিনে অসমান্য অবদান রেখেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন সমস্যায় থাকলেও জাতিকে এগিয়ে দিতে পিছপা হননি।
দুঃসময় ও সুসময়ে সাংবাদিকরা জাতির বিবেক জাগিয়ে রেখে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে বীর দর্পে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে দিয়েছেন। সেজন্য লেখক ও সাংবাদিকদের জীবন মান উন্নয়ন শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের মতো পরিস্থিতি সমাধান কল্পে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষায় এবং তাদের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গণমাধ্যম বান্ধব হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও প্রশংসিত হয়েছে।
মফস্বল এলাকা সাপ্তাহিক দৈনিক পত্রিকা কর্তৃপক্ষ প্রকাশনার আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তাদের প্রকাশনার কাজে অবশ্যই সরকার সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।