টেকসই উন্নয়ন : ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান::
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০২:০৬,অপরাহ্ন ২১ জুন ২০২১আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশকে অবিবেচ্য রেখে একটি সুন্দর পৃথিবীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এই দুয়ের যথাযথ সমন্বয় সাধানের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ সংরক্ষন করে যে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করা যায় তাকে টেকশই উন্নয়ন বলে। বিষেয়ে গুরুত্ব বিবেচনায় জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (২০১৫-২০৩০) প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করেছে। এই অধ্যয়নের মূল লক্ষ্য জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন কৌশলের বিশ্লেষণ এবং এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। পুঁজিবাদী সমাজ শুধু মুনাফাকামিতা ও বস্তুগত চাহিদা পূরণকেই টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে, কিন্তু ইসলাম গঠনমূলক উৎপাদানের পাশাপাশি মানবীয় মূল্যবোধ রক্ষা করাকে ও টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহন করে।
ইসলাম মানুষের সব ধরণের চাহিদার ব্যাপারে সার্বিক বা পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করে। ফলে ইসলাম টেকসই উন্নয়নকে ও তার দৃষ্টি সীমার বাইরে স্থান দেয়নি। ইসলামের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ব জগতেমানুষের অবস্থান, এ পৃথিবীতে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং দুনিয়ার সুযোগ সুবিধা বা নেয়ামত ভোগ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত। ইসলামী নীতিমালায় সরকার ও সমাজের অথ্যনৈতিক আচরণ বা তৎপরতা এবং সামাজিক পরিবেশকে এমন ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে, এর ফলে টেকসই ও কাঙ্কিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়। ইমলামী সমাজে অর্থনৈতিক তৎপরতায় মানবীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ বা বিধানগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে ইসলামী সমাজে অর্থনৈতিক তৎপরতাগুলো সুস্থ পরিবেশে এবং সঠিক নীতিমালা বা বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
এম খালফান টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে যেয়ে বলেন: Sustainable development from Islamic perspective seeks to establish a balance between the environment, economic and social dimensions. It means the balance of consumer welfare, economic efficiency, achivement of ecological balance in the framework of evolutionary knowledge based, and socially interactive model defining the social justice, charity and zakat are two mechanisms to reduce poverty.
টেকসই উন্নয়নকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করলে আমরা বুঝতে পারি, ইসলাম পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সামাজিক গতিবিধির মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, ভোক্তার কল্যাণ অর্থনৈতিক পর্যাপ্ততা এবং অভিব্যক্তিমূলক জ্ঞান ও সামাজিক মিথস্ত্রিয়ার বিভিন্ন মডেল তথা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দারিদ্র হ্রাসকারী দুটি বিশেষ কৌশল তথা বদান্যতা ও যাকাত ভিত্তিক পরিকাঠামোতে পরিবেশগত ভারসাম্য অর্জন। উন্নয়নের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষ যেসব সম্পদ ভোগ করে, ইসলামের দৃষ্টিতে তার প্রকৃত মালিক হলেন মহান আল্লাহ। তিনি মানুষকে অন্য সব সৃষ্টির চেয়ে বেশি মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছেন এবং পৃথিবীর সব কিছু মানুষের আওতাধীন করেছেন, যাতে মানুষ তার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারে।এরই আলোকে ও পরকালে মানুষের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার আচরণের প্রকৃতির ওপর। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: আমরা আদম সন্তানদের মর্যাদা দিয়েছি,ভূভাগে ও সাগরে তাঁদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি এবং তাদেরকে পবিত্র জীবিকাসমূহ দিয়েছি এবং আমি অন্য যতকিছু সৃষ্টি করেছি তার অধিকাংশের ওপরই আমি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে দুনিয়ার নেয়ামতসমূহের মানুষের প্রতি মহান আলস্নাহর অনুগ্রহ মাত্র, যাতে মানুষ একদিকে তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে ও এভাবে নিজেকে উন্নত করার সুযোগ পেতে পারে এবং অন্যদিকে তাকওয়া বা খোদাভীরুতা অবলম্বনের মাধ্যমে কু প্রবৃতিগুলো দমন করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন: হে মানবজাতি! জমিনে যা কিছু আছে তা থেকে বৈধ ও পবিত্র খাদ্য গ্রহন কর এবং শয়তানের পদক্ষেপের অনুসরণ করো না, কারণ সে অবশ্যই তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদাগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ খোলা রেখেছে। কিন্তু ইসলামের কাঙ্কিত টেকসই উন্নয়ন মানব জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই কিছু নিয়ম কানুন ও নীতিমালার দ্বারা বেষ্টিত। মানুষ যাতে বস্তুগত বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে ছুটতে যেয়ে লোভ লালসা, অপচয়, জুলুম, ও অত্যাচারে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্যেই এই সীমারেখা বা সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। একজন মানুষের জন্যে দুনিয়া ও এর সম্পদগুলো তখনই অপছন্দনীয়, যখন তা তাকে খোদাদ্রোহিতার দিকে নিয়ে যায় এবং এর ফলে সে অজ্ঞতা, বিভ্রান্তি ও জুলুমের অতল গহবরে নিক্ষিপ্ত হয়।
টেকসই উন্নয়ন প্রসঙ্গে হাসান যুবায়ের বলেন: Human beings are God Almightys representatives on the planet Earth. and they are entitled to benefit from its resources without selfishly monopolizing them. Human beings must seek to develop this planet in accordance with the provisions of the Holy Quran and the teachings of Prophet Muhammad, with the stipulation that current needs must be met without jeopardizing the rights of future generation.
মানব জাতি এই পৃথিবী নামক গ্রহে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সম্পদ একচেটিয়াভাবে ভোগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানব জাতি অবশ্যই পবিত্র কুরআন এবং মুহাম্মদ স. এর শিক্ষা অনুযায়ী তাদের সমসাময়িক চাহিদা পূরণ করবে এবং উন্নতির চেষ্টা করবে তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোন অধিকার যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্রের মূলনীতিসমূহের সাথে ইসলামের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পূর্বের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়নের যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটে উঠেছে নিম্নে ইসলামের আলোকে তার ব্যাখ্যা বিধৃত হলো:
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মানুষের মানবিক মৌলিক অধিকারসমূহের উন্নয়ই টেকসই উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য। টেকসই উন্নয়নের সব মডেলেই মৌলিক অধিকারসমূহকে মূল অনুষঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে। মহান আল্লাহ মানব জাতির পিতামতা আদম ও হাওয়া আ. এর সৃষ্টির পর পরই তাদের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করেন এবং তাদের আবাস্থল হিসেবে জান্নাতকে নির্ধারণ করেন। সেখানে তাদের সব ধরণে প্রাপ্তি ছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: তোমার জন্যই এটা থাকল যে, তুমি সেখানে (জান্নাতে) ক্ষুর্ধাত হবে না, নগ্নও হবে না। নিশ্চয় তুমি সেখানে পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্র ক্লিষ্ট ও হবে না।
ফলে এ ব্যবস্থায় সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হয়। নাগরিকের এ দাবি পূরণকে শাসক তার কর্তব্য মনে করেন। রাষ্টের সকল সদস্য এর দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। আবার ব্যক্তি নিজেও নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকে না। বরং কারো সহযোগিতা ছাড়াই নিজের জীবন নির্বাহের চেষ্টা করে। ইসলারে দৃষ্টিতে মানুষের মৌলিক অধিকার ও তা অর্জনের পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে যেসব লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে দারিদ্রের অবসান ও ক্ষুধামুক্তি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র অকল্যানকর, যা অনেক সময় মানুষেকে আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায়। শয়তান দারিদ্রের ভয় দেখিয়ে মানুষকে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হতে প্ররোচনা দেয়। আল্লাহ বলেন: শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।
এ কারণে ইসলাম দারিদ্রের অবসানের জন্য বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে। একদিকে সম্পদ যাতে সমাজের কিছু মধ্যে সীমিত না হয়ে যায় তার জন্য সম্পদের আবর্তনের উপর জোর দেয় “আল্লাহর বাণী: যাতে সম্পদ তোমাদের মধ্যকার ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।” অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে যাতে কোন প্রকার অসহায় লোক না থাকে তার জন্য ধনীর সম্পদে গরীবের অধিকার নিশ্চিত করে। “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এবং তাদের ধন সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক রয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষসহ সকল প্রাণীর খাদ্য গ্রহনের অধিকার রয়েছে। মহান আল্লাহ এ অধিকার বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন। আর পৃথিবীতে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিযক (পৌছানোর দায়িত্ব)আল্লাহর ওপর নেই। তিনি জানেন, তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। এ সবকিছুই এক সুষ্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে।
আর্থিক অসঙ্গতি বা অন্য কোনো কারণে কেউ যদি খাদ্য সংগ্রহে অসমর্থ হয়, তবে তাকে সহযোগিতা করা সামার্থ্যবানদের কর্তব্য। রাসূলূল্লাহ স. এ প্রসঙ্গে বলেছেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ স.কে জিজ্ঞাসা করল? ইসলামের মধ্যে সর্বোত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অপরকে খাওয়ানো এবং পরিচিতি ও অপরিচিতকে সালাম জানানো।
টেকসই উন্নয়নে জাতিসংঘ সব বয়সী মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনমান নিশ্চিত করতে গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামও মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার তাগিদে দিয়েছে। রাসূলূল্লাহ স. মদিনা রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের প্রতি যথাযোগ্য গুরুত্বরোপ করে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রবর্তন করেন। এ সময়ের চিকিৎসক ছিলেন হারিস ইবনে কালাদাহ আসসাকাফী ও আবু আবী রামসাহ আততামীমী প্রমুখ। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে রাসূলূল্লাহ স. মুসলমানদেরকে যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন আজকের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা তা পড়ে অবাহ না হয়ে পারে না। মদীনা রাষ্ট্রে গণস্বাস্থ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। রোগীদের দেখাশোনা, সেবা শুশ্রুষা এবং মৃদ ব্যক্তির দাফন কাফনে অংশগ্রহণ ও এসব কাজ সম্পদন করাকে রাসূলূল্লাহ স. ঈমানী দায়িত্বে পরিণত করেছেন। দেহ সুস্থ এবং আত্মার কল্যাণের জন্য হালাল ও পবিত্র তথা স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হালাল খাদ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন: হে মানব ম-লী পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু সমাগ্রী ভক্ষণ কর।
শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ মানব সম্পদে পরিণত হয়। একটি দক্ষ ও উন্নত মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা একটি অপরিহার্য শর্ত। ইসলাম বিদ্যাশিক্ষাকে প্রত্যেক নরনারীর উপর ফরয করে দিয়েছে। শিক্ষিত ব্যক্তির মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত বা প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত্ব দান করা হয়। আর বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই কেবল শিক্ষা গ্রহন করে।
পানির অপর নাম জীবন। সব প্রাণীর জীবনই পানি থেকে তৈরি। “আল্লাহ বলেন এবং প্রাণযুক্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। মহান আল্লাহ সকলের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন: তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছ? তোমরা কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষন করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি, তবু ও কেন তোমরাদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? ইসলামে পানি অধিকার হলো তার পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা সংরক্ষন করা এবং অপব্যবহার ও অপচয়ের হাত থেকে তাকে রক্ষা করা।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন সকল অন্যায় হত্যাকা হারাম করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছেন। তিনি বলেন: যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তোমরা তাকে হত্যা করো না। তবে আইন সম্মত হত্যার কথা স্বতন্ত্র।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা মানুষের মান সম্মান, সম্ভমের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিধান করে। বরং সম্মানের নিরাপত্তাকে তার মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করে। এ কারণে অপরের সম্মানহানি হতে পারে এমন সব কথা ও কাজ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পরচর্চা, মিথ্যা অপবাদ আরোপ, মন্দ নামে ডাকা, দূর্নাম, দোষারোপ করা। ঘরে ব্যক্তির সাবলীল ও শান্তিপূর্ণ বসবাস নিশ্চিত করার জন্যে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল কুরআন এসব বিষয়ে আলোকপাত করে আল্লাহ বলেন: হে মুমিনগণ! কোন পুুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর কোন নারীকে ও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারীনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না। ঈমানের পর মন্দ নাম অতি জঘন্য। যারা তওবা না করে তারাই জালিম। হে মুুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে বিরত থাক; কারণ অনুমান কোন কোনা ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চায়? বস্তুত তোমরা তো ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তির তার নিজে ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে এবং এটি তার মৌলিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। সত্যপথ মিথ্যা থেকে সুষ্পষ্ট ভাবে পৃথক হয়ে গিয়েছে। মানুষ ও পরিবেশ একে অপরের পরিপূরক। কেননা মানুষের আচার ব্যবহার পরিবেশ কর্তৃক প্রভাবিত হয় এবং এর ভিত্তিতে মানুষের জীবন যাত্রার মান পরিচালিত হয়। মানুষ সামাজিক জীবন বিধায় একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হয়, যাতে মানুষ কর্তৃক পরিবেশের কোনরুপ বিপর্যয় না হয়। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ও জাতীয় টেসই উন্নয়ন কৌশলপত্র পরিবেশ দূষন রোধ করে এর সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদের যথার্থ ব্যবহার প্রসংগে নবায়নযোগ্য জ্বালানী, অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়ন, টেকসই নগর ও সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা, ভূমির টেকসহীত্ব ইত্যাদির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা করেছে। ইসলাম ও এসব বিষয়ের বিস্তারিত নীতিমালা প্রদান করেছে।