তারা তিনজন মানবতার ফেরিওয়ালা

ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩২:৪৯,অপরাহ্ন ০১ জুলাই ২০২২সিলেটের ওসমানীনগরে মানবতা ফেরি করে বানভাসি মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছেন তিন তরুণ নেতা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড় থামিয়ে তারা এখন দৌড়াচ্ছেন বন্যা কবলিত মানুষের বাড়ি বাড়ি।
প্রতিদিন নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়ে তারা মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের মানবিকতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বলে আখ্যায়িত করছেন তাদের। বলছি ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ আম্বিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুর রহমান সুহেল ও যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলদার আলীর কথা।
জানা যায়, চলতি মাসে ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আম্বিয়া ও সুহেল চেয়ারম্যান পদে এবং দিলদার আলী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যস্থ সময় কাটাচ্ছিলেন। এমন সময় বন্যার পানিতে ভাসতে শুরু করে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন। বানভাসিদের দুর্ভোগ দেখে তারা মনোনয়ন পাওয়ার দৌড় থামিয়ে বানভাসি মানুষের খাদ্য সহযোগিতা প্রদানে ঝাপিয়ে পড়েন। নেতাকর্মীদের সহসযোগিতায় দিন রাত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ছুটে চলেছেন তারা উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাদের এই মানবিকতা দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল মহলে প্রসংশা কুড়াচ্ছেন। অবশ্য বন্যা অবনতির কারণে ২৭ জুলাই এর নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, উপজেলায় রাজনীতির মাঠে পৃথক দুটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন আম্বিয়া ও সুহেল। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর চেয়াম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর ছিলেন তারা। ১৭ জুন থেকে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করলে নির্বাচনী তৎপরতা বন্ধ করে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বানভাসি মানুষকে সহযোগিতায় ঝাপিয়ে পড়েন তারা। বন্যার শুরু থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বানভাসিদের মাঝে শুকনো ও রান্না খাবার এবং চাল-ডাল পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। প্রতিদিন এই দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে। খাবার প্যাকেটিংয়ের কাজে করছে একটি বড় টিম এবং মাঠ পর্যায়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি সেগুলো পৌছে দিচ্ছে একাধিক টিম। একই ভাবে দিলদার আলীও খাদ্য সাগগ্রী পৌছে দিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার মানুষ তাদের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মানুষের দুর্দিনে তাদের এই মানবিক কাজ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ত্রাণ তৎপরতার দৃশ্য রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে। অনেকেই তাদের মানবতার ফেরিওয়ালা বলে আখ্যায়িত করছেন।
জাবেদ আহমদ আম্বিয়া বলেন, মানুষের দুর্ভোগ দেখে নির্বাচনী তৎপরতা বন্ধ করে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। সকলের সহযোগীতায় প্রতিদিন ৫শতাধিক বন্যার্তকে শুকনো খাবার বিতরণ করছি। মাঝে মধ্যে রান্না খাবার এবং চাল-ডালও দিয়ে যাচ্ছি। দিনের বেলা ৪-৫টি দলে ভাগ হয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেই, আর রাতে সবাই একত্রিত হয়ে পরের দিনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করি।
আলতাফুর রহমান সুহেল বলেন, দায়িত্ববোধ থেকে নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় প্রতিদিন সকালে শুকনো খাবার এবং রাতে রান্না খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। প্রতিদিন অন্তত চারটি দলে ভাগ হয়ে খাদ্য সামগ্রীগুলো পৌছে দিচ্ছি এবং বড় একটি দল প্রতিনিয়ত খাবার প্যাকেটিংয়ের কাজ করছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার মানুষকে নিজেদের সাধ্য মতো খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
দিলদার আলী বলেন, প্রতিদিন কিছু খাদ্য সামগ্রী বানভাসিদের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছি। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজটি করছেন বলেও জানান তিনি।
গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল লেইছ বলেন, এই তিনজন আমার ছাত্র ছিল। তাদের মানবিকতা দেখে আমি মুগ্ধ হচ্ছি। মানুষের দুর্দিনে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।