প্রচলিত ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) ও চারটি হাদিসের গ্রহণযোগ্য উলামায়ে কেরামের অভিমত

এম জে আহমদ লতিফীঃ
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০০:৪৮,অপরাহ্ন ১০ নভেম্বর ২০১৯প্রথমেই শুরু করতে চাই মহান আল্লাহর একটি বাণী দিয়ে যা থেকে আমরা একটি মূলনীতি শিখব৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻭﻣﻦ ﻳﺸﺎﻗﻖ اﻟﺮﺳﻮﻝ ﻣﻦ ﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﺗﺒﻴﻦ ﻟﻪ اﻟﻬﺪﻯ ﻭﻳﺘﺒﻊ ﻏﻴﺮ ﺳﺒﻴﻞ اﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻧﻮﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻮﻟﻰ ﻭﻧﺼﻠﻪ ﺟﻬﻨﻢ ﻭﺳﺎءﺕ ﻣﺼﻴﺮا ( سورة النساء: الآية 115) অর্থ: সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর যে ব্যক্তি রাসুল (দ) এর বিরোধিতা করে এবং যে ব্যক্তি মুমিনদের পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে, আমি তাকে ঐ (ভ্রান্ত পথের) দিকে এগিয়ে যেতে দেই, আর আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব, আর জাহান্নাম খুবই নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল৷( সুরা নিসা : ১১৫) এই আয়াত থেকে আমরা যে মূলনীতি শিখলাম তা হলো , ” মুমিনগণের পথ অনুসরণ আবশ্যক, নতুবা আমাদের শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে৷” এখন আমরা দেখব উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে যে সকল ইমামদের সবাই মানেন তাদের মধ্য থেকে চারজনের অভিমত যা তারা চারটি হাদিসের আলোকে প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী (দ) সম্পর্কে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ৷
১, ইমামুল কুররা ওয়াল মুহাদ্দিসীন শামসুদ্দিন ইবনুল জাযরী (র) বুখারী শরীফের একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় তাঁর عرف التعريف بمولد الشريف কিতাবে লিখেন, ﻗﺪ ﺭﺅﻱ ﺃﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺑﻌﺪ ﻣﻮﺗﻪ ﻓﻲ اﻟﻨﻮﻡ، ﻓﻘﻴﻞ ﻟﻪ: ﻣﺎ ﺣﺎﻟﻚ، ﻓﻘﺎﻝ: ﻓﻲ اﻟﻨﺎﺭ، ﺇﻻ ﺃﻧﻪ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ اﺛﻨﻴﻦ ﻭﺃﻣﺺ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺃﺻﺒﻌﻲ ﻣﺎء ﺑﻘﺪﺭ ﻫﺬا – ﻭﺃﺷﺎﺭ ﻟﺮﺃﺱ ﺃﺻﺒﻌﻪ – ﻭﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﺑﺈﻋﺘﺎﻗﻲ ﻟﺜﻮﻳﺒﺔ ﻋﻨﺪﻣﺎ ﺑﺸﺮﺗﻨﻲ ﺑﻮﻻﺩﺓ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺑﺈﺭﺿﺎﻋﻬﺎ ﻟﻪ. ﻓﺈﺫا ﻛﺎﻥ ﺃﺑﻮ ﻟﻬﺐ اﻟﻜﺎﻓﺮ اﻟﺬﻱ ﻧﺰﻝ اﻟﻘﺮﺁﻥ ﺑﺬﻣﻪ ﺟﻮﺯﻱ ﻓﻲ اﻟﻨﺎﺭ ﺑﻔﺮﺣﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻪ، ﻓﻤﺎ ﺣﺎﻝ اﻟﻤﺴﻠﻢ اﻟﻤﻮﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﻣﺔ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺴﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻭﻳﺒﺬﻝ ﻣﺎ ﺗﺼﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻓﻲ ﻣﺤﺒﺘﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؛ ﻟﻌﻤﺮﻱ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﺰاﺅﻩ ﻣﻦ اﻟﻠﻪ اﻟﻜﺮﻳﻢ ﺃﻥ ﻳﺪﺧﻠﻪ ﺑﻔﻀﻠﻪ ﺟﻨﺎﺕ (الحاوي للفتاوى ج/1 ص/230)
অর্থাৎ, আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর একজন স্বপ্নে দেখলেন, আবু লাহাবকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমার অবস্থা কি? আবু লাহাব বলল, জাহান্নামে আছি, তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব হালকা করা হয় এবং আমার হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে পানি বের হয় যা আমি পান করি, আর এটা হলো ঐ আমলের পুরস্কার, যখন দাসী সুওয়াইবা আমাকে নবী (দ) এর জন্মের খবর দিয়েছিল আর আমি ভাতিজার জন্মে খুশি হয়ে সুওয়াইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম৷ ইমাম ইবনুল জাযরী (রহ) বলেন, আবু লাহাব এমন কাফির যাকে লানত করে সুরা লাহাব নাযিল হয়েছে সেই আবু লাহাব যদি নবী (দ) এর জন্মে খুশি হওয়ায় জাহান্নামে গিয়েও পুরস্কার পায়, তাহলে নবী (দ) এর কোনো উম্মত যদি নবী (দ) এর জন্মে খুশি হয়ে মহানবি (দ) এর মোহাব্বাতে তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করে, তাহলে আমি আমার জীবনের কসম করে বলছি, আল্লাহ তাকে এই কারণেই নিজ অনুগ্রহে জান্নাত দিবেন৷ ( আল হাবী লিল ফাতাওয়া , খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩০)।
২,ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) বলেন, তিনি বুখারী মুসলিমে দিন নির্দিষ্ট করে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) উপলক্ষে শোকরানা মাহফিলের দলিল পেয়েছেন৷ ﻭﻗﺪ ﻇﻬﺮ ﻟﻲ ﺗﺨﺮﻳﺠﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺃﺻﻞ ﺛﺎﺑﺖ ﻭﻫﻮ ﻣﺎ ﺛﺒﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﻴﻦ ﻣﻦ « ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺪﻡ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻓﻮﺟﺪ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ ، ﻓﺴﺄﻟﻬﻢ ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ : ﻫﻮ ﻳﻮﻡ ﺃﻏﺮﻕ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ﻓﺮﻋﻮﻥ ﻭﻧﺠﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﻓﻨﺤﻦ ﻧﺼﻮﻣﻪ ﺷﻜﺮﺍ ﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ » ، ﻓﻴﺴﺘﻔﺎﺩ ﻣﻨﻪ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺸﻜﺮ ﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻣﻦ ﺑﻪ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﻣﻌﻴﻦ ﻣﻦ ﺇﺳﺪﺍﺀ ﻧﻌﻤﺔ ﺃﻭ ﺩﻓﻊ ﻧﻘﻤﺔ ، ﻭﻳﻌﺎﺩ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﻧﻈﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ، ﻭﺍﻟﺸﻜﺮ ﻟﻠﻪ ﻳﺤﺼﻞ ﺑﺄﻧﻮﺍﻉ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ﻛﺎﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻭﺍﻟﺘﻼﻭﺓ ، ﻭﺃﻱ ﻧﻌﻤﺔ ﺃﻋﻈﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﻌﻤﺔ ﺑﺒﺮﻭﺯ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻴﻮﻡ؟ ﻭﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﺘﺤﺮﻯ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺑﻌﻴﻨﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻄﺎﺑﻖ ﻗﺼﺔ ﻣﻮﺳﻰ ﻓﻲ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ ، ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﻼﺣﻆ ﺫﻟﻚ ﻻ ﻳﺒﺎﻟﻲ ﺑﻌﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﻓﻲ ﺃﻱ ﻳﻮﻡ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻬﺮ ، ﺑﻞ ﺗﻮﺳﻊ ﻗﻮﻡ ﻓﻨﻘﻠﻮﻩ ﺇﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﺔ ، ﻭﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻓﻴﻪ . ﻓﻬﺬﺍ ﻣﺎ ﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺄﺻﻞ ﻋﻤﻠﻪ ( ﺍلأجوبة المرضية للسخاوي ص/1117-1118) অর্থাৎ, প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী (দ) সম্পর্কে একটি দলীল আমি (ইবনে হাজার)পেয়েছি যা বুখারী ও মুসলিমে আছে, নবী (দ) যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন যে, ইহুদিরা ১০ ই মুহাররাম রোযা রাখে, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এদিনে রোযা রাখার কারণ কী? তারা বলল, এই দিন আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ) ও আমাদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছিলেন, তাই শোকরিয়া হিসেবে আমরা রোযা রাখি৷ তখন নবী (দ) বললেন,তোমাদের চেয়ে আমিই রোযা রাখার বেশি হকদার৷ ( ইবনে হাজার রহ. বলেন) এই হাদিস থেকে এটা প্রমাণিত হয় কোনো নিয়ামত পেলে ঐ নির্দিষ্ট দিনে প্রতি বছর শোকরিয়া আদায় করতে কোনো সমস্যা নেই৷ আর শোকরিয়া আদায় করা যায় রোযা, সিজদা, তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে৷ আর সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলেন আমাদের নবী রহমাতুল্লিল আলামিন৷ সুতরাং তার জন্মদিনে, বা মাসে এমনকি সারা বছরও যদি তাঁর মীলাদে খুশি উদযাপন হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই৷ (আল আজওইবাতুল মারদ্বিয়া লিস সাখাবী, পৃষ্ঠা ১১১৭-১১১৮)
৩, ইমাম ইবনুল হাজ্ব আল মালিকী (রহ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী (দ) সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করেছেন, এবং মীলাদুন্নবী (দ) কে কেন্দ্র করে যে সকল বিদাত ( গান বাজনা, নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে শরীয়তবিরোধী কাজ) হয় এগুলোর বিরুদ্ধে লিখে, তারপর ঈদে মীলাদুন্নবী (দ) এর পক্ষেই লিখেন,ﻓﻜﺎﻥ ﻳﺠﺐ ﺃﻥ ﻳﺰاﺩ ﻓﻴﻪ ﻣ اﻟﻌﺒﺎﺩاﺕ ﻭاﻟﺨﻴﺮ ﺷﻜﺮا ﻟﻠﻤﻮﻟﻰ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺃﻭﻻﻧﺎ ﻣﻦ ﻫﺬﻩ اﻟﻨﻌﻢ اﻟﻌﻈﻴﻤﺔ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ اﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻟﻢ ﻳﺰﺩ ﻓﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ اﻟﺸﻬﻮﺭ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻦ اﻟﻌﺒﺎﺩاﺕ ﻭﻣﺎ ﺫاﻙ ﺇﻻ ﻟﺮﺣﻤﺘﻪ – ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺑﺄﻣﺘﻪ ﻭﺭﻓﻘﻪ ﺑﻬﻢ ﻷﻧﻪ – ﻋﻠﻴﻪ اﻟﺼﻼﺓ ﻭاﻟﺴﻼﻡ – ﻛﺎﻥ ﻳﺘﺮﻙ اﻟﻌﻤﻞ ﺧﺸﻴﺔ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﺽ ﻋﻠﻰ ﺃﻣﺘﻪ ﺭﺣﻤﺔ ﻣﻨﻪ ﺑﻬﻢ ﻛﻤﺎ ﻭﺻﻔﻪ اﻟﻤﻮﻟﻰ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺣﻴﺚ ﻗﺎﻝ {ﺑﺎﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺭءﻭﻑ ﺭﺣﻴﻢ} [ اﻟﺘﻮﺑﺔ: 128] . ﻟﻜﻦ ﺃﺷﺎﺭ – ﻋﻠﻴﻪ اﻟﺼﻼﺓ ﻭاﻟﺴﻼﻡ – ﺇﻟﻰ ﻓﻀﻴﻠﺔ ﻫﺬا اﻟﺸﻬﺮ اﻟﻌﻈﻴﻢ «ﺑﻘﻮﻟﻪ – ﻋﻠﻴﻪ اﻟﺼﻼﺓ ﻭاﻟﺴﻼﻡ – ﻟﻠﺴﺎﺋﻞ اﻟﺬﻱ ﺳﺄﻟﻪ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ اﻻﺛﻨﻴﻦ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ – ﻋﻠﻴﻪ اﻟﺼﻼﺓ ﻭاﻟﺴﻼﻡ – ﺫﻟﻚ ﻳﻮﻡ ﻭﻟﺪﺕ ﻓﻴﻪ» ﻓﺘﺸﺮﻳﻒ ﻫﺬا اﻟﻴﻮﻡ ﻣﺘﻀﻤﻦ ﻟﺘﺸﺮﻳﻒ ﻫﺬا اﻟﺸﻬﺮ اﻟﺬﻱ ﻭﻟﺪ ﻓﻴﻪ. ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻧﺤﺘﺮﻣﻪ ﺣﻖ اﻻﺣﺘﺮاﻡ ﻭﻧﻔﻀﻠﻪ ﺑﻤﺎ ﻓﻀﻞ اﻟﻠﻪ ﺑﻪ اﻷﺷﻬﺮ اﻟﻔﺎﺿﻠﺔ (المدخل ج/2 ص/3) অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে নিয়ামত (মহানবী স.) কে দিয়েছেন তার জন্য উচিত শোকরিয়াস্বরুপ বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করা ও ভালো কাজ করা৷ যদিও নবী (দ) এই উপলক্ষে অতিরিক্ত আমল করেন নি, কারণ তিনি উম্মতের প্রতি দরদী ছিলেন, তিনি অনেক আমল ছেড়ে দিতেন এই ভয়ে যদি তা উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যায়৷তবে মহানবী (দ) রবিউল আউয়াল মাসের ফযীলতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেমন, মুসলিম শরীফের হাদিসে আছে, কেউ একজন প্রতি সোমবার রোযা রাখার কারণ জানতে চাইলে নবীজী বলেছিলেন, এটা এমন একটি দিন যেদিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি৷ অতএব আমাদের উচিত, এই দিন এই মাসকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া৷ (আল-মুদখাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩)৷ ৪,ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) এর বিরুদ্ধে এক ভদ্রলোক ﺍﻟﻤﻮﺭﺩ ﻓﻲ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ নামে একটি কিতাব লিখেছিলেন, তখন ঐ কিতাবের জবাবে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি ( রহ) ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻤﻘﺼﺪ ﻓﻲ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ নামে একটি রিসালাহ লিখেন , যেই রিসালার প্রথমে ইমাম সুয়ুতি (রহ) বলেন, ﺃﺗﻜﻠﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺣﺮﻓﺎ ﺣﺮﻓﺎ আমি (সুয়ুতি)ঐ কিতাবের অক্ষরে অক্ষরে জবাব দিব৷ আর ইমাম সুয়ুতি তা করেছেনও, ঐ রিসালায় তিনি দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন৷ বর্তমানে মীলাদবিরোধীরা যা প্রশ্ন করেন তা ঐ ভদ্রলোকের কিতাব থেকে ধার করা প্রশ্ন, যেগুলোর উপযুক্ত জবাব ইমাম সুয়ূতী (রহ) বহু আগেই দিয়ে গেছেন৷ সেই রিসালাহ থেকে একটি অংশ উল্লেখ করছি, ﻗﻠﺖ: ﻭﻗﺪ ﻇﻬﺮ ﻟﻲ ﺗﺨﺮﻳﺠﻪ ﻋﻠﻰ ﺃﺻﻞ ﺁﺧﺮ، ﻭﻫﻮ ﻣﺎ ﺃﺧﺮﺟﻪ اﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻋﻦ ﺃﻧﺲ «ﺃﻥ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻟﻲﻫ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻖ ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﺑﻌﺪ اﻟﻨﺒﻮﺓ» ﻣﻊ ﺃﻧﻪ ﻗﺪ ﻭﺭﺩ ﺃﻥ ﺟﺪﻩ ﻋﺒﺪ اﻟﻤﻄﻠﺐ ﻋﻖ ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﺳﺎﺑﻊ ﻭﻻﺩﺗﻪ، ﻭاﻟﻌﻘﻴﻘﺔ ﻻ ﺗﻌﺎﺩ ﻣﺮﺓ ﺛﺎﻧﻴﺔ، ﻓﻴﺤﻤﻞ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ اﻟﺬﻱ ﻓﻌﻠﻪ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻇﻬﺎﺭ ﻟﻠﺸﻜﺮ ﻋﻠﻰ ﺇﻳﺠﺎﺩ اﻟﻠﻪ ﺇﻳﺎﻩ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭﺗﺸﺮﻳﻊ ﻷﻣﺘﻪ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺺﻟﻲ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ ﻟﺬﻟﻚ، ﻓﻴﺴﺘﺤﺐ ﻟﻨﺎ ﺃﻳﻀﺎ ﺇﻇﻬﺎﺭ اﻟﺸﻜﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﺑﺎﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻭﺇﻃﻌﺎﻡ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﻭﺟﻮﻩ اﻟﻘﺮﺑﺎﺕ ﻭﺇﻇﻬﺎﺭ اﻟﻤﺴﺮاﺕ (الحاوي للفتاوي ج/1 ص/230)
সারাংশ হলো,ইমাম সুয়ূতী (রহ) বলেন, (ঈদে) মীলাদুন্নবী(দ) এর ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি দলীল খোঁজে পেয়েছি, আর তা হলো নবুয়াতের পর নবী (দ) তাঁর আকিকা তিনি নিজে করেছেন, অথচ আমরা জানি তাঁর আকিকা পূর্বেই নবীজীর দাদা আব্দুল মুত্তালিব নবীজীর জন্মের সপ্তম দিনেই করেছেন৷শরীয়তে দুইবার আকিকার নিয়ম নেই, সুতরাং আকিকা করে নবী (দ) তাঁর উম্মতকে [(ঈদে) মীলাদুন্নবী (দ) উদযাপনের] শোকরিয়া প্রকাশের শরয়ী পদ্ধতি শিখিয়ে দিলেন৷ যেমনিভাবে তিনি তাঁর নিজের উপর তাশাহহুদে সালাত(দরুদ) পড়ে উম্মতকে শিখিয়েছিলেন৷ অতএব নবী (দ) এর জন্মের শোকরিয়া স্বরুপ অনুষ্ঠান, মানুষকে খাওয়ানো এ রকম অন্যান্য কাজ যা আনন্দ প্রকাশ করে এবং নৈকট্য লাভের মাধ্যম সবই করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব৷ (আলা হাবী লিল ফাতাওয়া, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩০)
পরিশেষে বলতে চাই, আরো অসংখ্য উলামায়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অভিমত প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী (দ) এর পক্ষে৷ আমি চারটি হাদিস থেকে চারজন গ্রহণযোগ্য ইমামদের ইজতেহাদ উল্লেখ করেছি মাত্র৷ অতএব আমরা যেন মুমিনদের পথ অনুসরণ করেই ঈদে মীলাদুন্নবী (দ) উদযাপন করতে পারি আল্লাহ যেন আমাদের সেই তাওফীক দান করেন৷ আমিন
লেখকঃ ধর্মিও শিক্ষক, সাভার ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা। গ্রামঃ আব্দুল্লাহপুর, ওসমানীনগর, সিলেট।