বাবাকে অপহরণ চেষ্টা, ছেলেসহ গ্রেফতার ৭

সুরমা নিউজ ২৪ ডট নেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৪:০৮,অপরাহ্ন ০৬ অক্টোবর ২০২১সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বাবাকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে ছেলেসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমনকি বাবাকে হত্যা ও গুমের পরিকল্পনাও ছিল ছেলের। ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন বাবা নিজেই।
মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেফতার সাতজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
ভুক্তভোগী বাবার নাম মোস্তফা রাশেদ। গ্রেফতার হওয়া ছেলে ২৫ বছর বয়সী খালেদ মাহমুদ।
অপহরণ চেষ্টার সময় রাশেদকে উদ্ধার ও তার ছেলেসহ অন্যদের আটক করা হয়। পরে এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে শাজাহানপুর থানায় মামলা করা হয়। রাশেদ নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে তার ছেলে খালেদসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরে আটকদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
গ্রেফতার অন্য ছয়জন হলেন, রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার বালিয়াপুকুর গ্রামের মৃত আব্দুল মাজিদের ছেলে মোসাদ্দেকুর রহমান, কয়েরদারা বিলপাড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুস সাত্তার একই জেলার কাশিয়াডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে অলি, পাবনা সদর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে নোমান আরাফাত, ছাতিয়ানী গ্রামের শহিদ আলীর ছেলে আজিজুর রহমান সুমন, এবং লস্করপুর গ্রামের রেহেজ শেখের ছেলে মানিক শেখ।
জানা গেছে, মোস্তফা রাশেদ বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পোড়াপাইকর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত আবেদ আলী। তিনি চাকরির সুবাদে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়াপাড়া গ্রামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। সেই বাড়িতেই তিনি বসবাস করতেন। তবে ২০১৫ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর মাঝিড়াপাড়ার বাড়িটি ভাড়া দিয়ে পরিবারসহ সোনাতলায় নিজ গ্রামে গিয়ে বসবাস করতেন। কিন্তু দুই মাস ধরে তিনি মাঝিড়াপাড়া বাড়িতে একটি ঘরে একাই বসবাস করে আসছেন। অন্য ঘরগুলো ভাড়া দেয়া রয়েছে। মাঝিড়াতে থেকে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। এছাড়াও বাড়িভাড়া ও পেনশনের টাকা থেকে প্রতিমাসে স্ত্রী-সন্তানদের টাকা পাঠাতেন রাশেদ। তার তিন ছেলে সন্তান রয়েছে।
বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ বাবাকে অপহরণ করে হত্যা ও গুম করার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একটি মোবাইল ফোন থেকে মোস্তফা রাশেদকে জানানো হয় যে, বাংলা লিংক কোম্পানি থেকে গিফ্ট এসেছে, সেটি শাজাহানপুর উপজেলার সি-ব্লক এলাকা থেকে নিতে হবে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে একই নম্বর থেকে আবারো ফোন আসে গিফট মাঝিড়া স্ট্যান্ড থেকে নিতে হবে।
সবশেষে রাত ১২টার দিকে ফোন করে জানানো হয় গিফ্ট দেওয়ার জন্য মোস্তফা রাশেদের বাড়িতেই তারা আসছেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোস্তফা রাশেদ দেখতে পান তার ছেলে খালেদ মাহমুদ ৬ সহযোগিকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ছেলের সহযোগিরা নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দেন। এবং তাদের সঙ্গে মোস্তফা রাশেদকে থানায় যেতে বলেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ছেলেসহ অন্যদের কথায় রাজি হচ্ছিলেন না রাশেদ। একপর্যায়ে তার দুই হাত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে খালেকসহ তার সহযোগিরা রাশেদকে কোলে তুলে মাঝিড়া বন্দরে নিয়ে এসে মাইক্রোবাসে উঠানো হয়। মাইক্রোবাস চালু করার মুহুর্তে মোস্তফা রাশেদের বাড়ির ভাড়াটিয়া নাজমুল, ওমর ফারুক, হেলাল উদ্দিন অপহরণের বিষয়টি বুঝতে পেরে দৌঁড়ে মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে হাজির হন। এবং থানা পুলিশকে খবর দেন তারা। সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোস্তফা রাশেদকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে মাইক্রোবাসসহ অপহরণের সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেফতার করে।
শাজাহানপুর থানার ওসি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রেফতার সাতজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে খালিদ মাহমুদ তার বাবা মোস্তফা রাশেদকে অপহরণের পর হত্যা ও গুম করার পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।