ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সিলেটিদের জয়জয়কার

লন্ডন অফিস
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩২:৫৯,অপরাহ্ন ১১ মে ২০২২ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। তাদের অনেকেই নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা একাধিক বাংলাদেশী প্রার্থীর বিজয়ের খবর পাওয়া গেছে। যাদের অধিকাংশই সিলেটি।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তত আটজন প্রবাসী বাংলাদেশি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের বিজয়ের খবরে ওই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আনন্দের বন্যা বইছে। বিজয়ী কাউন্সিলরদের স্বজনেরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও এলাকাবাসীর মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করছেন।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের ছয়জন প্রবাসী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শাহারপাড়া গ্রামের সাবিয়া কামালি লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে লন্ডন বারা অব নিউ হামের স্টাটপোর্ট এলাকা থেকে, সৈয়দপুর গ্রামের সৈয়দা সায়মা আহমেদ লন্ডনের রেড ব্রিজ এলাকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো, একই গ্রামের সৈয়দ আলী আহমেদ লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে রচডেল এলাকায় তৃতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
এছাড়া একই গ্রামের সৈয়দ শেকুল ইসলাম লেবার পার্টি থেকে লন্ডনের রেড ব্রিজ বারার ক্রানব্রুক ওয়ার্ডের, শেখ আবদুল কাদির লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিসেবে সেন্ট্রাল সাউথসি ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো এবং সৈয়দ আবদুল হাফিজ লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে লন্ডন পোর্ট সাউথ বাফিন্স ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিল নির্বাচিত হয়েছেন। আবদুল হাফিজ টানা তৃতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি সৈয়দপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ শেকুল ইসলামের শ্যালক স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, ‘আমার বোনজামাই সৈয়দ শেকুল ইসলাম চার মাস আগে দেশে এসে গ্রামের বাড়িতে এক মাস থেকে গেছেন। তিনি গ্রামের মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন। বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখেন। তার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার খবরে আমরা খুবই খুশি।’
অন্যদিকে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাকিলা বেগম ওয়ালসাল পালফ্রি ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। আর রেবেকা সুলতানা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বেথনাল গ্রিন ওয়ার্ডে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার বাড়ি উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের বাউধরন। তাঁর স্বামী আহাদ চৌধুরী লন্ডনের ‘দ্য এডিটরস’-এর সম্পাদক।
আরেক কাউন্সিলর শেখ আবদুল কাদিরের ভাতিজা শেখ রামিম আহমেদ বলেন, তার চাচা লন্ডনে কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়ার খবরে পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ চলছে। তিনি দেশে এলে আরও বড় পরিসরে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। লন্ডনের পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নে তিনি অনেক ভূমিকা রাখছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ রাহমান ও আমিনুল হক ওয়েছ বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদে সিলেটের লুৎফুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর পদে বিভিন্ন শহর থেকে ইতিমধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার আটজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁদের বিজয়ে লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটিতে আনন্দের বন্যা বইছে।
সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবুল হাসান বলেন, লন্ডন থেকে দেশে এসে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আবার বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে গিয়ে এলাকার সন্তানেরা মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হচ্ছেন, যা সত্যিই গৌরবের। তাঁর ইউনিয়নের পাঁচজন বাসিন্দা যুক্তরাজ্যে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ইউনিয়নবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বলেন, তাঁরা নির্বাচিত হওয়ায় দেশে থাকা স্বজনদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, মিষ্টি বিতরণ চলছে।
জগন্নাথপুর ব্রিটিশ বাংলা এডুকেশন ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ কাদির বলেন, ‘টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচনে সিলেটের লুৎফুর রহমান তৃতীয়বারের মতো মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে জগন্নাথপুরের বাসিন্দাদের জয়জয়কারে আমরা সত্যিই খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’
জানা যায়, জন্মসূত্রে শুধু মৌলভীবাজারেরই ১৫ জনের জয়ের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় নির্বাচনে এবার সাতটি শহরে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে একটিতে জয় পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফর রহমান। তিনি লেবার পার্টির প্রার্থী ছিলেন। মেয়র নির্বাচনে সাতটির মধ্যে ছয়টির ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে লুৎফর রহমানসহ লেবার পার্টিরই পাঁচ জন জয় পেয়েছেন। একটিতে জয় পেয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটের প্রার্থী। মেয়র নির্বাচনে এবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভের ভরাডুবি হয়েছে।
অন্যদিকে ব্রিটেনের ১৪৬টি কাউন্সিলে প্রায় ৫ হাজারের মতো কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কয়েক হাজার ব্রিটিশ। এরমধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতও অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা থেকে আসা অন্তত ১৫ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
বিজয়ীদের মধ্যে চমক দেখিয়েছেন মুজিবুর রহমান জসিম ও রহিমা রহমান দম্পতি। জসিম নিউহাম কাউন্সিল থেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। কুলাউড়ার সন্তান এবং মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তার স্ত্রী তিনবারের সাবেক কাউন্সিলর রহিমা রহমান একই বারার বেকটন ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিত হয়েছেন ইজলিংটন কাউন্সিল থেকে সাবেক মেয়র সদর উপজেলার জিলানী চৌধুরী, কার্ডিফ সিটি কাউন্সিল থেকে শহরের মুসলিম কোয়ার্টারের সালেহ আহমদ, লন্ডনের বার্কিং ও ডেগেনহাম কাউন্সিল থেকে সদর উপজেলার খ্যাতনামা শিশু সংগঠক মুহিবুল আলম চৌধুরী, হ্যান্সলো থেকে মুজিবুর রহমান জুন, রেডব্রিজ কাউন্সিল থেকে বর্তমান কাউন্সিলর রাজনগর উপজেলার পুস্পিতা গুপ্ত এবং সদর উপজেলার সন্তান ও বড়লেখার পুত্রবধূ সাঈদা চৌধুরী।
আরও নির্বাচিত হয়েছেন কার্ডিফ থেকে জেসমিন চৌধুরী, পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য মো. ফিরুজের কন্যা বাবলিন মল্লিক, হ্যারো থেকে শ্রীমঙ্গলের শাহানিয়া চৌধুরী জেরিন, ক্যামডেন পেনক্রেস ও সোমার্স থেকে সদর উপজেলার শাহাজান মিয়া (শাহ)।
এছাড়াও নির্বাচিতদের মধ্যে জোসনা ইসলাম, জেসমিন চৌধুরী ও শাহিন মিয়ার নাম পাওয়া গেছে। তারা তিনজনই মৌলভীবাজারের সন্তান।