মা হারা সন্তানের ফরিয়াদ

রায়হান আহমদ:
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১১:৫৩,অপরাহ্ন ১৯ আগস্ট ২০২১মাগো, তুমি নেই। কোথাও নেই। রান্না ঘরটাও খালি। তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আগুন জ্বলেনি উনুনে। সকালের চা-তো তুমিই বানিয়ে দিতে মা। তোমার হাতের রান্না ছাড়া আমার খেতে ভালো লাগে না। আজ পাঁচদিন হয়-তোমার হাতের তৈরি কিছুই খেতে পাইনি মা। ওপারে-যেখানে তুমি আছো, সেখান থেকে কি তোমার সন্তানদের দেখতে পাও না তুমি? একটিবারও তো জানতে চাইলে না আমরা কেমন আছি! তোমাকে ছাড়া কেমন থাকা যায় মা?
মা, তুমি ছিলে আমার অভিযোগ-অনুযোগের সবকিছু। কষ্ট উপশমের ওষুধ থেকে শুরু করে নিজের সুখটাও ভাগাভাগি করতাম তোমার সাথে। মাঝে মাঝে তোমার বকাটাও খুব ভালো লাগতো মা। এখন যেদিকে তাকাই, সবকিছুতেই তোমার শূন্যতা অন্তরে আঘাত করে। আমার শরীর খারাপ হলে তুমিই ছিলে ওষুধ। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে যখন মিষ্টি শাসন করতে আমি এমনিতেই অর্ধেকটা ভাল হয়ে উঠতাম মা। আজ তোমার মতো করে আমায় আদর বা গালি দেওয়ারও কেউ নেই মা।
মা, মাগো। তোমার হঠাৎ চলে যাওয়াটা মানতে পারছি না কিছুতেই। কল্পনাতেও ছিল না-এভাবে শেষ হয়ে যাবে সব। এলোমেলো হয়ে যাবে আমাদের সাজানো সুখের সংসারের সকল ব্যাকরণ। বসত ঘরের প্রতিটি রুম, প্রতিটি স্থান তোমার স্পর্শে মোড়ানো মাগো। তাইতো আমার ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে না। সবার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। এভাবে পালিয়ে বেড়ালেই কি তোমার শূন্যতা পূরণ হবে মা?
জানো মা, ছোট বোন দু‘টো কেমন চুপসে গেছে। বাবাও যেন দিশেহারা। এলোমেলো সবকিছু। তাদের দিকে ভাল করে তাকাতে পারি না। দু’চোখ ভরে কান্না আসে। বার বার ভেঙে পড়ি তুমিহারা প্রবল আর্তচিৎকারে।
মাগো, এতো কী জরুরী ডাক ছিলো এই অবেলা, অসময়ে সব ফেলে চলে যাওয়ার? তুমিহীন সবকিছু অন্ধকার। ঘরের বাতিটাকেও কেমন ম্লান মনে হয়। তোমাকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না মা। আর পারছি না মাগো…
(সিলেটের জমিন পত্রিকার ওসমানীনগর প্রতিনিধি ও সুরমানিউজ ডটনেটের স্টাফ রিপোর্টার রায়হান আহমদের মা শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সিলেট নগরীতে ৩টি হাসপাতাল ঘুরেও আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় তাকে ভর্তি করা যায়নি। পরে অক্সিজেনের অভাবে গাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। উপরের লেখাটি রায়হান আহমদের ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া।)