লিংকন সাইকেল ওয়ালা এবং বিশ্বজয়

সারওয়ার চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৩:৪৬,অপরাহ্ন ০৪ নভেম্বর ২০১৯
সাইদুর রহমান লিংকন যিনি আমাদের সবার প্রিয় লিংকন ভাই, যখন ব্রংক্সে বসতি গড়েন তখন উনার নামের সাথে ” সাইকেল ওয়ালা ” উপাধিটা আমাকে ভীষনভাবে কৌতুহলী করে, পরে অবশ্য অনেকের কাছেই জানলাম উনি সাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন ! এবার বইমেলায় উনার সেই সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণের বর্ণনাবহুল সংকলন ” সাইকেলে বিশ্বজয় ” প্রকাশিত হয়েছে, সদা হাস্যজ্জল লিংকন ভাই উনার নিজহাতে লেখা সেই এডভেঞ্চার সংকলনের একটা কপি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন, এরকম একটা ভ্রমণ সংকলন উপহার দেওয়ার জন্য উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বইটা না পড়লে বুঝা যাবেনা, কি পরিমাণ ইচ্ছে শক্তি থাকলে সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমনের মত একটা অসাধ্যকে জয় করা সম্ভব ! লিংকন ভাইয়ের লেখার হাতও যে খুবই শক্তিশালী সেটার প্রমাণ ” সাইকেলে বিশ্বজয় ” বইয়ের প্রতিটা পরতে পরতে, প্রতিটা বর্ণনায় ফুটে উঠেছে ! বিশ্ব ভ্রমনের শুরু থেকেই তিনি প্রতিকুলতার মোকাবেলা করেছেন, তিনি লিখেছেন ” নিজের পরম বন্ধু থেকে আত্মীয় স্বজন অনেকের কাছে অনুরোধ করি আমার সফর সঙ্গী হতে ! সত্যি কথা বলতে কি, তারা আমাকে নিয়ে উপহাস করে। “
সকল নেতিবাচকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুরু হয় লিংকন সাইকেল ওয়ালার বিশ্ব যাত্রা, প্রথমেই বেনাপোল বর্ডার হয়ে ভারতে প্রবেশ, তারপর শ্রীলংকা মালদ্বীপ ঘুরে আবারও ভারত হয়ে পাকিস্তান ! পাকিস্তানে ইমরান খানের সাথে সাক্ষাৎ, পাকিস্তানী এক ভদ্রলোকের অথিতি পরায়নতা, দশ হাজার রূপি উপহার সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক, অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে ইরানে ঢোকার পথে পাকিস্তানী ইমিগ্রেশন কর্তৃক হয়রানী, লক আপে ঢোকানো — অবশ্যই মর্মস্পর্শী, সেই সাথে রোমাঞ্চকর ! ইরানে প্রবেশ করে ইরানী ভাবীর স্নেহময়তা, নিঃস্বার্থ সেবায় সেই দেশের মানুষের মানবিক গুনের পরিচয় ফুটে উঠে, আবার কুয়েতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের বিশেষ করে বাংলাদেশী মহিলাদের দূর্বিষহ জীবনের কথা জেনে খুবই খারাপ লাগলো। কুয়েতের পর সিরিয়া, তুরস্ক, গ্রীস, ইতালী, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ব্রিটেন ইত্যাদি প্রায় ত্রিশটি দেশ ঘুরে সর্বশেষে নোঙর করেন আমেরিকায়, আর এখানেই স্হায়ী আবাস গড়েন ! অন্য বেশ কয়েকটি উন্নত দেশে স্হায়ী হওয়ার সুযোগ পেলেও আমেরিকাকে কেন বেছে নিলেন সেটার কারনও তিনি সুন্দরভাবে বইটিতে তুলে ধরেছেন।
লিংকন সাইকেল ওয়ালা দেখিয়ে দিয়েছেন অদম্য স্পৃহা আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে যেকোন অসম্ভবকে জয় করা সম্ভব, প্রয়োজন আন্তরিকতা, একাগ্রতা, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ! লিংকন সাইকেল ওয়ালা হতে পারেন আজকের বাংলাদেশের দিশেহারা তরুণ সমাজের জন্য মেরুদন্ড সোজা করে নিজের পায়ে চলার এক জীবন্ত উদাহরণ।
এত এত দেশ ঘুরে আমেরিকায় এসে উনি সাইকেলের চাকা থামালেও বিভিন্ন সামাজিক এবং মানবিক কর্মকান্ডের চাকা উনি ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছেন ! বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে তৈরী করেছেন স্মৃতিসৌধ, যেটা ইতিমধ্যে নিউ ইয়র্কের বুকে বাংলাদেশীদের একটা আবেগের জায়গায় পরিণত হয়েছে, গড়ে তুলেছেন ” হৃদয়ে বাংলাদেশ ” নামের এমন একটা সংগঠন, যেটি সারা বছরব্যাপী দেশীয় সংস্কৃতি ও মুল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার মত বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করে থাকে।
নিউ ইয়র্কে লিংকন ভাই বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন যেগুলোর মুল উদ্দেশ্য শুধু ব্যবসা নয় বরং ব্যবসার মাধ্যমে জনকল্যাণ, নতুন আগত বাংলাদেশীদের দিক নির্দেশনা ! যে স্পৃহা নিয়ে যৌবনে তিনি বিশ্বজয় করেছিলেন সেই একি স্পৃহাকেই বুকে ধারণ করে মানব কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। লিংকন সাইকেল ওয়ালার কার্যক্রমে প্রমাণিত হয় তিনি কখনোই নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করেননা বরং অন্য আরও অনেকের যাতে মঙ্গল হয়, উপকার হয় সেই উদ্দেশ্যেই তার প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালিত হয় ! এরকম একজন সাহসী, পরোপকারী মানুষের জন্য মনের তাগিদেই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভকামনা সবসময় ।