শ্রীমঙ্গলে শরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে নববধূকে হত্যা

স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩৩:১১,অপরাহ্ন ২৩ অক্টোবর ২০১৯মৌলভীবাজারের শ্র্রীমঙ্গলে বিয়ের তিন মাস যেতে না যেতে এক প্রবাসী নব বধূকে বিষ পান করিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে। এবিষয়ে নববধুর বাবা সুলতান মিয়া শ্রীমঙ্গলের রামনগর গাজীপুরের মেয়ের জামাই মনির, মেয়ের সৎ শ্বশুর হারুন, শ্বাশুরি মনি বেগম কে আসামী করে শ্রীমঙ্গল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ২২ আগষ্ট উপজেলার খাসগাঁও এলাকার মরিয়ম বেগম (২৫) এর সাথে রামনগর গাজিপুর এলাকার মনিরুল ইসলাম মনিরের সাথে পূর্ব প্রেমের সূত্র ধরে মনিরুলের মায়ের অজান্তে বিয়ে হয়। মনিরুলের মা মনি বেগম নিজেও সৌদি প্রবাসী।
সৌদি যাবার পূর্ব থেকে মরিয়মের সাথে মনিরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমিক মনির মরিয়মকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। বিয়ের পর থেকেই মনির মরিয়মকে ঘরে তুলে নেয়। এক পর্যায়ে বিদেশ থেকে আনা মরিয়মের সব টাকা পয়সা সে হাতিয়ে নেয়। মনিরের প্রবাসী মা মনি বেগম গত সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরেন। তিনি ছেলের এই বিয়ে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। কিছু দিন পর মনি বেগম মরিয়মকে অনুষ্ঠান করে ঘরে তোলার কথা বলে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরপর পর মনি ছেলেকে নিয়ে দেশের বাড়ী নোয়াখালি যায়। সেখান থেকে শারমিন নামে এক ভাইঝিকে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। শারমিনের উপস্থিতির খবর পেয়ে মরিয়ম স্বামীর বাড়িতে আসে। মনিরের সাথে শারমিনের বিয়ের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে সংসারে অশান্তি শুরু হয়।
অভিযোগে মরিয়মের বাবা জানান, গত ১৪ অক্টোবর রাত ১১ টার দিকে একটি অজ্ঞাত ফোন থেকে জানতে পারেন তার মেয়ে মরিয়ম বিষপান অবস্থায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এখবর জানার পর মরিয়মের বাবা সুলতান মিয়া তার বড় মেয়ে ফাতেমা বেগমকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় মরিয়ম জানায়, মনিরের সাথে তার মামাত বোনের বিয়ে হয়েছে। এখবর জানার পর রাতে স্বামী ও শ্বাশুরীর কাছে জানতে চাইলে তারা মরিয়মকে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে মরিয়ম পানি চাইলে স্বামী ও শ্বাশুরী শরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে পান করায়। সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তারা তাকে বাড়ির পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় বলে মরিয়ম তার বাবার কাছে জানায়।
পরে স্থানীয়রা মরিয়মকে পানি থেকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেখান থেকে তাকে দ্রুত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত শুক্রবার ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মরিয়ম। শুক্রবার দুপুরে মরিয়মের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করেন। পরদিন শনিবার ভোর রাতে মরিয়ম সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
মরিয়মের বাবা সুলতান মিয়া বলেন, মাত্র ৩ মাস হলো না আমার মেয়েটির বিয়ে দিলাম। এরি মধ্যে ওরা মেয়েটাকে বিষ দিয়ে হত্যা করলো। আমি এর উচিত বিচার চাই। এবিষয়ে জানতে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মনির ফোন ধরেননি। পরে তার মা মনি বগেম ফোন রিসিভ করেন। তিনি বলেন, আমার ভাইঝি শারমিন নোয়াখালি থেকে বাসায় বেড়াতে আসে। ভাইঝির আসার খবর জানতে পেরে মরিয়ম বাপের বাড়ি থেকে ছুটে আসে। এনিয়ে ঝগড়া বিবাদের এক পর্যায়ে মরিয়ম অভিমান করে বিষ খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। মনি বেগম বলেন, আমি সৌদি থাকি। ছেলে কবে বিয়ে করেছে, আমি এর কিছুই জানিনা।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুছ ছালেক বলেন, আপাতত অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এটা আত্মহত্যা না কি বিষ প্রয়োগে হত্যা তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে জানা যাবে।