দোয়ারাবাজার উপজেলা উপনির্বাচন : তৃতীয় হয়ে জামানত হারাচ্ছেন আ.লীগ প্রার্থী

সুরমা নিউজ ২৪ ডট নেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৭:৫০,অপরাহ্ন ২৭ জানুয়ারি ২০২২সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম জামানত হারাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী চারজন প্রার্থীর মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে তিনি তৃতীয় হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী। কাপ–পিরিচ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯০৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বারী আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৮৭ ভোট। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৪ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেহ লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ২০০ ভোট।
নৌকার এমন শোচনীয় পরাজয় প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক বলেছেন, দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। যাঁকে নৌক দেওয়া হয়, তিনি রাজৈনিতক ব্যক্তিত্ব নন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। এরপরও তিনি শুরু থেকেই তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু প্রার্থী ব্যবসায়িক চিন্তায় চলার কারণে মানুষ তাঁর কাছ থেকে সরে গেছেন। এ কারণে মানুষ ভোটেই যায়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী দুঃখ করে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নে ভুল হয়েছে। দলের কোনো নেতা মনোনয়ন পেলে দোয়ারাবাজারে ভোটের উৎসব হতো। এই লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। আমরা সেই সুযোগ হারালাম।’
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দোয়ারাবাজার উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৭ হাজার ৬৯২ জন। ভোট পড়েছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামানত হিসেবে প্রার্থীদের অর্থ জমা দিতে হয়। এই অর্থ ফেরত পেতে হলে বিধি অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট পেতে হয় কোনো প্রার্থীকে। দোয়ারাবাজার উপজেলায় উপনির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হিসাবে জামানাতের অর্থ ফেরত পেতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ৪ হাজার ৭১১ ভোট পেতে হতো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৭৪ ভোট। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেহও জামানত হারিয়েছেন।
রাতে ফল প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি তো নির্বাচন আগেই ছেড়ে দিয়েছি। যখন বুঝতে পেরেছি আমার পাশ থেকে অনেকেই সরে গেছেন।’ কারা সরে গেছেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা সঙ্গে ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। বেশি কথা বললে সমস্যা, আমার ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি এর বেশি কোনো কথা বলব না।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনায়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১১ জন। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতীকও ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পান মো. নুরুল ইসলাম। তিনি দলের কোনো পদে নেই।
এলাকায় একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। নুরুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় দলের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো ছিল না। আবার অনেকেই তলে তলে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। নির্বাচনে জয়ী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম গত ৩০ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। শূন্য পদ পূরণে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।